বর্তমানের প্রচলিত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম গুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম , লিন্যাক্স কার্নেলে তৈরী চমৎকার ইন্টারফেস ও সহজ চালনা পদ্ধতির জন্য ছোট থেকে বড় সকলের কাছেই এটি প্রিয় একটি সিস্টেম।
এন্ড্রয়েডের জনক বলতে যার নাম আসে সেই ব্যাক্তিটি হল Andy Rubins, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক মনোবিজ্ঞানীর ঘরে জন্ম তার , চাকরী জীবন শুরু করেছিল বিখ্যাত কম্পানী অ্যাপলে , চাকরী ছেড়ে নিজে কিছু করায় মন দিল, তৈরী করল হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস ম্যাজিক কাপ , কিন্তু তা জনপ্রিয়তা পেল না , কয়েকজন পরিচিত সহকর্মী নিয়ে গড়ে তুললেন আর্টেমিস রিসার্চ নামের একটি প্রতিষ্ঠান,
যারা ওয়েবটিভি নিয়ে কাজ করেছিল । সন্তুষ্ট হতে পারল না রুবিন্স, তৈরী করল নতুন একটি প্রতিষ্ঠান নাম ডেঞ্জার , সেখান থেকেই সূচনা হল এন্ড্রয়েড এর।
যারা ওয়েবটিভি নিয়ে কাজ করেছিল । সন্তুষ্ট হতে পারল না রুবিন্স, তৈরী করল নতুন একটি প্রতিষ্ঠান নাম ডেঞ্জার , সেখান থেকেই সূচনা হল এন্ড্রয়েড এর।
তখন ২০০৩ সাল জনসাধারন বলতে গেলে এন্ড্রয়েড বলে কোন শব্দের সাথে পরিচিত হয়নি , রুবিন্স তখন ডিজিটাল ক্যামেরার অপারেটিং সিস্টেম তৈরী নিয়ে কাজ করছিলেন । তিনি কিছুদিনেই লক্ষ করলেন ডিজিটাল ক্যামেরার বাজার খুব একটা সুবিধাজনক নয় , তাই তিনি মোবাইলের জন্য তার অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন এর চিন্তা করলেন। তার সাথে কাজ করছিল তখন আরো কয়েকজন , রিচ মাইনার (ওয়াইল্ডফায়ার কমউনিকেশনস, ইনকর্পোরেটেডের সহ প্রতিষ্ঠাতা) ,নিক সিয়ারস (টি-মোবাইলের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট)এবং ক্রিস হোয়াইট (ওয়েবটিভি’র ডিজাইন এবং ইন্টারফেস প্রধান)
যেহেতু তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন তাই এনড্রয়েড প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যক্রম চালাত অনেকটাই লুকিয়ে। প্রতিষ্ঠান থেকে এটা বলা হয়েছিল যে তারা শুধু মোবাইলের একটি সফটওয়্যারের কাজ করছে। ১ বছরের মধ্যেই রুবিন্স এর সমস্ত টাকা শেষ হয়ে যায় ,কাজ সম্পন্ন হল তবুও ঠিকমত মানুষের কাছে তার এই প্রযুক্তি পৌছাল না , সে সময় কোম্পানী কোন প্রকার ঝুকি নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তারা বিক্রি হয়ে যাওয়ার স্বিদ্ধান্ত নেয়।
এন্ড্রয়েড সবার নজরে এসেছিল ২০০৫ সালের ১৭ ই আগস্ট যখন টেক জায়ান্ট কোম্পানী গুগোল এন্ড্রয়েড কিনে নেয় , গুগোল যখন এন্ড্রয়েড কিনে নেয় তখন এন্ড্রয়েডের অবস্থা সুবিধাজনক ছিল না তবুও গুগোল শুরুতেই মোবাইল বিজনেস এর চিন্তা করে । তখন গুগলের চিন্তা কোন হার্ডওয়্যার ভিত্তিক ছিল না তাদের সমস্ত টার্গেট সফটওয়্যার ভিত্তিক ছিল , এন্ড্রয়েড কিনে নেয়ার পর এর সাবেক তিন কর্মচারীকেই তাদের দায়িত্বে বহাল রাখে , যার ফলে মালিকানা পরিবর্তন হলেও এর প্রতিষ্ঠাতারা এর সাথেই রয়ে যায় , এন্ড্রয়েড কিনার পর থেকেই গুগল তাদের নিজস্ব মোবাইল আনছে এমন খবর চারদিকে প্রকাশিত হতে থাকে , বিবিসি , ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মত বড় বড় সংবাদ মাধ্যম প্রচার করতে থাকে গুগলের সম্ভাব্য নতুন মোবাইলের খবর , মূলত তখন গুগোল মোবাইল কোম্পানীগুলোকে স্মার্টফোন হিসেবে এন্ড্রয়েড ব্যাবহারে সহায়তা করত ( এখনও করছে )
সর্বপ্রথম HTC কোম্পানী গুগলের সহায়তায় প্রথম এন্ড্রয়েড ফোন তৈরী করে যার নাম ছিল HTC Dream । ধীরে ধীরে অন্যান্য কোম্পানীও এন্ড্রয়েড ব্যাবহারে আগ্রহ দেখাতে থাকে ,
সর্বপ্রথম HTC কোম্পানী গুগলের সহায়তায় প্রথম এন্ড্রয়েড ফোন তৈরী করে যার নাম ছিল HTC Dream । ধীরে ধীরে অন্যান্য কোম্পানীও এন্ড্রয়েড ব্যাবহারে আগ্রহ দেখাতে থাকে ,
এর পর থেকেই গুগল এন্ড্রয়েড আপডেট করা শুরু করে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছে । প্রথমদিকের বেশ কয়েকটি ভার্শন রিলিজ হওয়ার পর এন্ড্রয়েড তাদের ভার্সনের নাম দেয়া শুরু করেন মজার ব্যাপার হল প্রত্যেকটি ভার্শনের নাম ইংলিশ বর্নমালার ক্রমানুসারে এবং মিষ্টিজাত খাবারের নাম অনুসারে দেয়া , ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
এন্ড্রয়েডের সুবিধা কি এমন প্রশ্ন যদি জিজ্ঞেস করা যায় তবে নিঃসন্দেহে যে কেও বলবে এর এপস এর প্রাচুর্যতা , গুগলের প্লে স্টোর ছাড়াও অসংখ্য ওয়েবসাইট এ এন্ড্রয়েড সাপোর্টেড এপস পাওয়া যায় , কিছু টাকা দিয়ে কিনতে হলেও অনেক এপসই বিনামূল্যে পাওয়া যায় , এপ্লিকেশন মার্কেটে এখন প্রায় ২০০,০০০ এর বেশী এপস রয়েছে , প্রতিনিয়তই নতুন নতুন এপস তৈরী হচ্ছে ,যার ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে এন্ড্রয়েড দুনিয়া ,
এন্ড্রয়েড তাদের প্রতিটি ভার্শনেই নতুন নতুন ফিচার যুক্তকরেছে ,
এন্ড্রয়েডেরপ্রথম ভার্শন ১.০ যা রিলিজ হয়েছিল ২০০৮ সালে এতে ছিল এপ স্টোর যা পরে প্লে স্টোর নামে প্রকাশ পায় , অনস্ক্রীন কীবোর্ড ছিল না তাই এটি চালাতে কীপ্যাড যুক্ত মোবাইল প্রয়োজন ছিল,২০০৯ সালে যখন ভার্শন ১.৫ প্রকাশ পেল তখন অনস্ক্রীন কীবোর্ড চালুকরল ।২০১০ এ এন্ড্রয়েডের ভার্শন ২.৩ প্রকাশের সময় স্যামসাং ও এন্ড্রয়েডের আনুষ্ঠানিক পার্টনারশীপ হয়, পরবর্তী ভার্শনগুলোতে যুক্ত হয় প্যাটার্ন লক , মোবাইল টিভি, ফিংগারপ্রিন্ট সিকিউরিটি, মাল্টি উইন্ডো , ভলকান এপিআই ,গুগল এসিস্ট্যান্ট ইত্যাদি
এইভাবেই এন্ড্রয়েড তাদের প্রতিটি ভার্শনে একের পর এক প্রযুক্তি যুক্ত করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে বিশ্বকে ।
এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ( লিন্যাক্স কার্নেল সহ ) প্রায় ১২ মিলিয়ন কোডিং লাইনের সমন্বয়ে তৈরী হয়েছে এর মধ্যে
৩ মিলিয়ন এক্স এম এল লাইন , ২.৮ মিলিয়ন সি ল্যাংগুয়েজ লাইন , ২.১ মিলিয়ন জাভা লাইন , ১.৭৫ সি++ লাইনব্যাবহার করা হয়েছে
এটি জাভার উপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং জাভা কোর লাইব্রেরীতে চলে
দিন দিন এন্ড্রয়েডের ব্যাবহার বেড়েই চলছে , ২০১১ সালে গুগলের দেয়া তথ্য মতে এন্ড্রয়েডের ব্যাবহার কারীর সংখ্যা ১৯০ মিলিয়নের ও বেশী ,এন্ড্রয়েড প্রযুক্তি খুবই দ্রুততার সাথে উন্নতি করছে ২০১৭ সালে এন্ড্রয়েডের নতুন সংস্করন O (oreo) প্রকাশ পেতে যাচ্ছে । দেখা যাক এন্ড্রয়েড তার আসন্ন ভার্সন গুলোতে ব্যাবহারকারীর জন্য কি চমক রাখছে।