লিট বাংলা ডট টেক, প্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক বাংলাতেই।

হ্যাকিং / সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলা প্রযুক্তির ব্লগ

হার না মানা মানুষটি; আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা “জ্যাক মা” এর গল্প।

প্রাইমারিতে দুইবার ফেল, মাধ্যমিকে  তিনবার ফেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তিনবার ফেল, চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ৩০ বার ব্যর্থ,হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১০ বার আবেদন করে ১০ বারই প্রত্যাখ্যাত হইয়েছিল , এত ব্যার্থতার ঝুলি যার জীবনে তিনি হলেন বর্তমানে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি, নাম     “জ্যাক মা”  , অনেকেই তাকে নামে চিনে না  কিন্তু সকলেই তার প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচিত , জ্যাকমার সেই প্রতিষ্ঠানের নাম আলিবাবা , বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই কমার্স সাইট , ই কমার্স সেক্টরের সফল মানুষদের তালিকায় তিনি অন্যতম ।
তার এই সফলতা রাতারাতি আসেনি , এর পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ, ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের গল্প। 






১৯৬৪ সালে চিনের হোয়াং ঝু প্রদেশে তিনি জন্মগ্রহন করেন , ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি  ছিলেন পরিবারের  ২য় সন্তান  , খুব একটা স্বচ্ছল পরিবার ছিল না তার , মা বাবা দুজনই গান গেয়ে বেড়াতেন । জ্যাক মা এর দাদা ছিল জাতীয়তাবাদী দলের স্থানীয় অফিসার ,চেয়ারম্যান মাও ক্ষমতায় আসার পর তার দাদাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় , তাদের পরিবারের  শিল্প কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা এসে পড়ে, জ্যাকমা ছিলেন লিকলিকে শরীরের অধিকারী , স্কুলে পড়া অবস্থায় তার প্রিয় কাজ ছিল ঝি ঝি পোকা সংরক্ষন করা ,

ছাত্র হিসেবে জ্যাকমা খুব একটা ভাল ছিল না , ইংরেজী ভাষাটা ভাল লাগত তার,
১৯৭৬ সালে চেয়ারম্যান মাও এর মৃত্যুর পর  চিনে বিদেশী পর্যটক আসা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে সে সময় মাও বিদেশিদের সাথে ঘুরে ঘুরে ইংরেজি  রপ্ত করে নেয় । দীর্ঘ ৯ বছর ফ্রী ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করেন , এসময় একটি রেডিও কিনেন তিনি ইংরেজি শোনার জন্য।
ইংরেজিতে ভাল হলেও গনিতে ছিল বরাবরের মতই দুর্বল , জাতীয় কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় পরপর দুইবার ফেল করেন তিনি  , ৩য় বারের প্রচেষ্টায় তিনি ভর্তি হন হুয়াং ঝু টিচার্স ইন্সটিটিউট, এটিকে বলা হত হুয়াংঝুর সবচেয়ে নিম্নমানের প্রতিষ্ঠান, কলেজে পড়ার সময় জ্যাক মা এর পরিচয় হয় ঝাং ইং এর সাথে ,পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়, জ্যাকমা তার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৮৮ সালে গ্র্যাজুয়েশনের পর তিনি স্থানীয় কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে জোগদান করেন, ৫ বছর চাকুরীর সময় তার বেতন ছিল ১৫ ডলার।  চাকরীর সময় তিনি কে এফ সি তে চাকরির আবেদন করেছিলেন। ২৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে জ্যকমা বাদে বাকি ২৩ জনের চাকরী হয়েছিল। পুলিশে আবেদনের সময় ৫ জনে ৪ জনই চাকরী পেয়েছিল সেখানেও তিনি ব্যার্থ ছিলেন। পরে জ্যাকব স্বিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাবসা করার , খুলে বসলেন এক অনুবাদ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানেও ব্যার্থ হয়ে পরেন তিনি , এসময় তিনি টাকার জন্য রাস্তায় মালগাড়িও টানতেন । ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানীর অনুবাদক হয়ে আমেরিকা ভ্রমনের সুযোগ হয় তার , মজার কথা হল চুক্তি অনুযায়ী সেই কোম্পানী তাকে এর জন্য কোন টাকাই দেয় নি বরং পিস্তলের ভয় দেখিয়েছিল ,  তবে এই আমেরিকা ভ্রমন তার জীবনকে পরিবর্তন করে দেয় , তিনি পরিচিত হন ইন্টারনেট এর সাথে
তিনি জানতে পারেন যে ইন্টারনেট থেকে সকল তথ্যই নাকি পাওয়া যায় , তিনি প্রথম বিয়ার লেখে সার্চ করলেন , ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতে গিয়ে তিনি দেখলেন সেখানে ম্যান্ডারিন (চিনা ভাষা) ভাষায় কোন তথ্যই নেই , এমনকি চীন নিয়েও কোন তথ্য নেই, তিনি দেশে ফিরে এলেন , নতুন এক কোম্পানী খুলে বসলেন , সেটির জন্য ওয়েবসাইট নির্মান করালেন এবং তাতে রপ্তানীকারক চীনা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য দিতে লাগলেন , সেটি ছিল চীনের প্রথম ইন্টারনেট ব্যাবসার ওয়েবসাইট , সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল জ্যাকমার ওয়েব ল্যাংগুয়েজ সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না এবং এখনও নেই ।যাই হোক বরাবর এর মত তার এবারের প্রচেষ্টাও ব্যার্থ হল...
৪ বছর পর জ্যাকমা তৈরী  করল আলিবাবা নামের নতুন কোম্পানী , জ্যাকমা প্রথম তার ১৭ জন বন্ধুকে একদিন বাসায় দাওয়াত করে তার নতুন কোম্পানী ও তার প্ল্যানের কথা  জানায় , সারারাত জ্যাক মা এই প্ল্যান নিয়ে ভাবে এবং  ঠিক  করেন উনি ওনার নিজের আইডিয়া অনুযায়ী সামনে এগুবেন যে যাই বলুক না কেন।

১৯৯৯ সালে জ্যাকমা  মোট ১৮ জন নিয়ে তার আলিবাবা কোম্পানী চালু করেন ,তৎকালীন সময়ে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য আলিবাবা যেন আশার আলো হয়ে হাজির হয়, খুব দ্রুততার সাথে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।  এবং প্রথম বছরেই কনসোর্টিয়াম থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পান , এর পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।  জ্যাক মা তার পারিবারিক জীবন নিয়ে খুব একটা মিডিয়ায় আসেন নি  স্ত্রী , এক ছেলে ও একমেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার ,

জীবনে বার বার ব্যর্থ হয়েও তিনি হার মানেননি , প্রতিবার নতুন করে শুরু করেছেন , যেই জ্যাক মা চাকরির জন্য ৩০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন সেই জ্যাক মার প্রতিষ্ঠান আলিবাবা ডটকম চীনে নতুন করে ১৪ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন , যে জ্যাকমা টাকার জন্য মালবাহি গাড়ি টেনেছে সেই জ্যাকমা আজ নিজের কর্মপ্রচেষ্টায় ২৫০০ কোটি ডলারের মালিক ।

খুব ভাল বক্তা তিনি , মানুষকে খুব সুন্দর উৎসাহ দিতে পারেন, তার বিভিন্ন  উক্তি  আজ বিশ্বের শত শত তরুনদের মনে উৎসাহ জোগায় , ২০১৫ সালে হংকং এর একটি অনুষ্ঠানে তরুন উদ্যোগতাদের উদ্দেশ্যে তিনি খুব সুন্দর বক্তব্য দিয়েছিলেন 
“আমি এমন বহু মানুষ দেখেছি যারা অবাস্তব ও অসম্ভব কল্পনায় ডুবে থাকে ,তারা ভাবে যে অন্য সবাই ভুল , তারাই ঠিক । আলিবাবায় আমরা ১৮ জন এটাই ঠিক করেছিলাম আমরা আমাদের বিশ্বাসে অটল থাকব , একসঙ্গে সকল চড়াই উতরাই পারি দিব , আমাদের মাঝে কোন স্বপ্ন বা কল্পনা ছিল না, ছিল আশা  ।

তোমরা নিজেকে প্রশ্ন কর , তোমর স্বপ্ন থাকলে তা পুরনে তুমি অটল কিনা ? যদি কোন লক্ষ থাকে তবে তা পুরনে সাথি যুগিয়ে নিও , একা পথচলা খুবই বিরক্তিকর, নিজের কাজ ঠিক ভাবে করলেই একটী ব্যাবসা দাঁড়িয়ে যায় না  এর জন্য প্রয়োজন একদল মানুষের মধ্যে সুন্দর বোঝাপরা।