অনেককাল আগে থেকেই মানুষ গননার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে , গননার সুবিদার্থে তৈরী করে বিভিন্ন নিয়ম ও যন্ত্র
মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে যন্ত্রের সাহায্যে গণনার যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নানা ধাপ পেরিয়ে কম্পিউটার ও তার প্রযুক্তি অগ্রগতি অব্যাহত। সূচনা পর্বে কম্পিউটার ছিল শুধু মাত্র একটি গণনা যন্ত্র, নাম অ্যাবাকাস (ABACUS)। প্রকৃতপক্ষে এখন আমরা ক্যালকুলেটর বলতে যা বুঝি, অ্যাবাকাস ছিল তা-ই। কাঠের একটি বাক্সের মত জিনিসে কয়েকটি পুতি লাগানো থাকত যা দিয়ে ক্যালকুলেটরের মত হিসাব করা হত । আজ কম্পিউটার বলতে সাধারণ ভাবে যে যন্ত্রটির চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তা প্রযুক্তিগত বিবর্তনের দীর্ঘ পথ অতিক্রমের ফসল। এই বিবর্তনে একের পর এক যে সব যন্ত্রের আবির্ভাব ঘটেছে, সেগুলি হল (১) অ্যাবাকাস, (২) প্যাসকালের যান্ত্রিক গণক, (৩) চার্লস ব্যাবেজের ডিফারেন্সিয়াল ইঞ্জিন, (৪) বৈদ্যুতিন সংখ্যা গণক বা ইলেকট্রনিক নিউমেরিক ইন্টিগ্রেটর অ্যান্ড ক্যালকুলেটর (ENIAC), (৫) সর্বজনীন স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বা ইউনির্ভাসাল অটোম্যাটিক কম্পিউটার (UNIVAC)।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কম্পিউটারের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে । কম্পিউটারের এই পরিবর্তনের বিবর্তনকে ৫ টি প্রজন্মে ভাগ করা হয়েছে , কম্পিউটার সংক্রান্ত আলোচনায় ‘প্রজন্ম’ বলতে প্রযুক্তিগত ধাপকে বোঝায়।
প্রথম প্রজন্ম (১৯৪২-১৯৫৫)
দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৫ – ১৯৬৪)
তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৪ – ১৯৭৫)
চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭৫ ও তার পরবর্তী সময়)
পঞ্চম প্রজন্ম ( আসন্ন )
প্রথম প্রজন্ম (১৯৪২-১৯৫৫)
১৯৪২ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে যে সব কম্পিউটার তৈরি হয়েছে, সেগুলিকে বলা হয় প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার। ঐ সব কম্পিউটারের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোর মূল যন্ত্রাংশ ছিল ভ্যাকুয়াম টিউব। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক হিসাবে এই সব কম্পিউটারের নানা সুবিধা থাকলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এগুলির কিছু অসুবিধাও ছিল।
প্রথমত, এই সব কম্পিউটার ছিল আকারে বড়। দ্বিতীয়ত, এগুলি সব সময় বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করতে পারত না। তৃতীয়ত, শীততাপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা ছাড়া এগুলিকে ব্যবহার করা যেত না। চতুর্থত, প্রায়ই এ সব কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ত। যেমন, ভ্যাকুয়াম টিউব প্রায়ই খারাপ বা নষ্ট হয়ে যেত। তখন তা বদলানো ছাড়া উপায় থাকত না। পঞ্চমত, এগুলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার উপযোগী ছিল না।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৫ – ১৯৬৪)
দ্বিতীয় প্রজন্মে কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রায় সমস্ত দিক দিয়েই আগ্রগতি শুরু হয়। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধানে কম্পিউটার এর প্রয়োগ ইত্যাদিতে। এই সার্বিক আগ্রগতির প্রধান কারন ছিল ১৯৪৭ সালে Transistor এর আবিষ্কার। ১ম প্রজন্মের তুলনায় সুবিধা ছিল প্রথম প্রজন্মের তুলনায় আকারে ছোটো। কম পরিমান তাপের উতপত্তি প্রথম প্রজন্মের তুলনায়। দ্রুত গতিতে ক্রিয়াশীল। কিন্তু ক্রমাগত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। কুলিং সিস্টেম এর প্রয়োজন ছিল বিধায় দ্রুততার সাথেই নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার এর আগমন ঘটে।
তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৪ – ১৯৭৫)
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছিল ট্রানজিস্টর। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে তার জায়গা নিলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আই সি), যা সাধারণত সিলিকনের একটি মাত্র টুকরোর উপরে তৈরি অতি ক্ষুদ্র স্থানে সীমাবদ্ধ বিদ্যুৎ সঞ্চালন চক্র। যে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আই সি-র এই ব্যবহার, তার নাম লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন (এল এস আই) টেকনোলজি।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে অসুবিধার মাত্রা খুবই কম আসে, সুবিধা বেড়ে যায় অনেকটাই। প্রথমত, তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলি ছিল আকারে ছোট।
দ্বিতীয়ত, এগুলি আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করতে পারত। তৃতীয়ত, এগুলি ব্যবহারের সময় কম তাপ উত্পন্ন হত। চতুর্থত, এগুলি তথ্য বিন্যাসের কাজ দ্রুত করতে পারত। পঞ্চমত, এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ছিল কম। ষষ্ঠত, এই কম্পিউটারগুলি ছিল বহনযোগ্য, অর্থাৎ সহজেই এগুলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা নিয়ে যাওয়া যেত। সপ্তমত, এগুলি চালাতে কম বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হত। অষ্টমত, এগুলির বাণিজ্যিক উত্পাদন ছিল তুলনামুলক ভাবে সহজ এবং এর খরচ ছিল কম।
চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭৫ ও তার পরবর্তী সময়)
চিপ (Chip) তৈরির প্রজুক্তিতে অভাবনীয় আগ্রগতি হল চতুর্থ প্রজন্মে। যার ফলশ্রুতি হল LSI (Large Scale Integration) circuit এবং VLSI (Very Large Scale Integration) circuit প্রযুক্তি। যার সাহায্যে একটি চিপে এক লক্ষ্যেরও বেশি ট্রানজিস্টার রাখা সম্ভব হল। ফলে সার্কিটের আকার এতোটাই ছোটো হয়ে গেল যে , সি পি উ (CPU) কে একটি মাত্র চিপের মধ্যে আনা সম্ভব হল। ফলে চম্পুতেরের আকার অনেক ছোটো হল এবং তার বিশ্লেষণ ক্ষমতাও অনেক গুন বেশি হল।আকারে অনেক ছোটো ও বহন যোগ্য।রক্ষণাবেক্ষণের খরচ খুব কম।বহু উদ্দেশ্য সাধক।
কম বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন। তবে এর জটিল গঠন থাকায় এটি সবার বোধগম্য নয় এছাড়া এর কোন অসুবিধা নেই ।
৫ম প্রজন্মঃ
বিজ্ঞানীরা এখন পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরির কাজে ব্যস্ত, চলেছ আরও উন্নত ও পরিমার্জিত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গবেষণা। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে অপটিক ফাইবার প্রযুক্তির প্রয়োগ। মনে রাখতে হবে, মানুষের মেধার যেমন স্বকীয়তা আছে, কম্পিউটারের কিন্তু তা নেই। কম্পিউটারকে মেধাসম্পন্ন করে তুলতে হয়। তাই কম্পিউটারের মেধা কৃত্রিম মেধা। এই মেধা ও তার ব্যবহারকে অপটিকাল ফাইবার ও অন্যান্য প্রযুক্তির সাহায্যে কত তীক্ষ্ণ ও দক্ষ করে তোলা যায়, পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে চলছে তারই পরীক্ষা-নিরীক্ষা।