চাঁদে অভিজানে সফলতার পর থেকেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে যায় । নতুন লক্ষ্য হিসেবে উপস্থিত হয় মংগল গ্রহ ।পৃথিবীর নিকটবর্তী হওয়ায় এই গ্রহ নিয়েই সবচেয়ে বেশী আগ্রহ মানুষের ,
১৯৬৫ সালে মেরিনার ৪ নামের মহাকাশযান সর্বপ্রথম মঙ্গল অভিজানে যায় । এই অভিযান থেকেই শুরু হয় মঙ্গল সম্পর্কে বিভিন্ন ধারনা , মঙ্গলে পানির অস্ত্বিত্ব , প্রানের অস্তিত্ব ইত্যাদি । মঙ্গল অভিযানের সবচেয়ে সফল অভিযানটি হচ্ছে করছে নভোযান কিউরিওসিটি , এটি নাসার মঙ্গলে পাঠানো ৭ম নভোযান । মঙ্গলে অবতরনের অল্প সময় পরই কাজে লেগে পড়ে রোবটটি ।
২০১১ সালের ২৬ শে নভেম্বর যাত্রা শুরু করা কিউরিসিটি প্রায় ২৪৯,২২৮,৭৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মঙ্গলে পৌছায় , এতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ মাস । বিজ্ঞানীরা এই অভিযান নিয়ে ছিল চরম উৎকন্ঠায়। অভিযান শুরু থেকে মাটিতে কিউরিওসিটির অবতরন ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে শ্বাস্রুদ্ধকর মুহুর্ত । মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সময় প্রায় ১২০০০ মাইল প্রতি ঘন্টা বেগে প্রবেশ করে এবং অবতরনের সময় এর বেগ ছিল ২ মাইল প্রতি ঘন্টা ।
কিউরিওসিটি রোবট সম্পর্কে আরো কিছু কথাঃ
তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য রোবট থেকে এর দক্ষতা বেশী ছিল । দৈর্ঘে প্রায় ১০ ফুট এবং চওড়ায় প্রায় ৭ ফুট আকৃতির এই রোবটের ভর ছিল ৯০০ কেজি । RTG টেকনলজিতে শক্তি উৎপাদন করত রোবটটি । RTG হল এক প্রকার ইলেক্ট্রিক জেনারেটর যা তেজষ্ক্রিয় ক্ষয় ব্যাবহার করে । কিউরিওসিটি এমন ভাবে তৈরী করা যে এটি চলার সময় প্রায় ৩০ ইঞ্চি উচ্চতার বাধাও অতিক্রম করতে পারে, গতির হিসেবে নেহায়েত কম যায় না রোবটটি , সর্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ কিলোমিটার প্রতিঘন্টায় । মঙ্গলের তাপমাত্রা হুটহাট করে উঠানামা করে , ৩০ থেকে ১২৭ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড তাপমাত্রা থেকে বাচতে এই রোবটের ছিল নিজস্ব তাপ নিয়ন্ত্রন প্রযুক্তি । এতে ব্যাবহার হয়েছে ১৭ টি ক্যামেরা । যাতে মাইক্রোস্কোপিক থেকে শুরু করে দীর্ঘ জিনিসের ছবিও অনায়াসে তোলা যাবে, আবহাওয়া স্টেশন , পাওয়ার ড্রিল , এক্স রে , লেজার মেশিন কি নেই এতে । এটি মঙ্গলে পাঠানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল কারন এর ওজন ছিল পূর্বের সব রোবট থেকে বেশী।
যা যা করবে এই রোবটঃ
ভুমির উপাদান বিশ্লেষণ , প্রানের অস্তিত্ব খোজা , মাটির নমুনা , কার্বন চক্র ও বিভিন্ন গ্যাস সনাক্ত করন , পানির উপস্থিতি , ৪ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে মঙ্গলের আবহাওয়া নির্নয় , মঙ্গলের জ্বালামুখ গেইল সম্পর্কে তথ্য নির্ণয় ইত্যাদি
সফলতাঃ
এই রোবট টি মহাকাশযান দ্বারা পাঠানো সফল রোবট গুলোর মধ্যে অন্যতম , ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের এই রোবটটি এর মধ্যেই অসংখ্য ছবি , তথ্য , রিপোর্ট পৃথিবীতে পাঠিয়েছে , পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে , বিভিন্ন ধরনের নতুন পাথর শিলা প্রবাহমান নদিপথের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া গেছে যার মাধ্যমে একসময় মঙ্গলে পানির প্রাচুর্যতা অনুধাবন করা হয়
এটির মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে অনেক কিছুই বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে ।