লিট বাংলা ডট টেক, প্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক বাংলাতেই।

হ্যাকিং / সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলা প্রযুক্তির ব্লগ

জানেন কি?ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে!!!!



আপনি টেবিলে বা কোলে আপনার কম্পিউটার নিয়ে বসে আছেন, আর আরেক প্রান্তে আপনার বন্ধু কম্পিউটার নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু আপনি আর আপনার বন্ধুর কম্পিউটারের ফাঁকের মধ্যে আরো ডজন খানি কম্পিউটার রয়েছে যা আপনার আর আপনার বন্ধুর কম্পিউটারের মধ্যের ফাঁকা স্থান পূরণ করছে। আর এভাবেই একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটার সংযুক্ত রয়েছে গোটা পৃথিবী জুড়ে আর এটাই হলো দ্যা ইন্টারনেট।

ইন্টারনেট কি ?
ইন্টারনেট নাম টার ভিতর ই জিনিষটা আসলে কি বুঝা যাচ্ছে… নেট তথা জাল যেহেতু নামের ভিতর আছে তবে অবশ্যই জালের কোন ব্যপার আছে ভিতরে। পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কম্পিউটার গুলো একসাথে যুক্ত হয়ে জালের মতো যে নেটওয়ার্ক বুনেছে সেটাই ইন্টারনেট। একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটারের সংযোগ করা থাকে বিভিন্ন উপায়ে। কোন কম্পিউটার গুলো সংযুক্ত থাকে পুরাতন কপার ক্যাবল দ্বারা আবার কোন গুলো ফাইবার-অপটিক ক্যাবল (যা আলোর স্পন্দনের মধ্যে ডাটা সেন্ড করে) দ্বারা আবার কোন কম্পিউটার গুলো বেতার কানেকশানে যুক্ত থাকে (বেতার কানেকশান মানে আমরা যাকে ওয়্যারলেস বুঝি,এটি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে) এবং কোন কম্পিউটার গুলো স্যাটালাইটের সাথে সংযুক্ত থাকে। 
আর এইভাবেই আমরা উপভোগ করতে পারি ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজ সুবিধা, ইমেইল সেবা, অথবা ডাউনলোড করি এমপিথ্রী মিউজিক ফাইলস।
ইন্টারনেটের ডাটা গুলো কীভাবে আদান প্রদান করা হয়?
ইন্টারনেট মূলত টেলিফোন নেটওয়ার্ক এর মতো কাজ করে থাকে। কিন্তু ইন্টারনেটের ডাটা বহন করা আর টেলিফোন লাইনে কল করা আলাদা ব্যাপার। আপনি যখন আপনার কোন বন্ধুকে রিং করেন তখন আপনার টেলিফোনে আপনি এবং আপনার বন্ধুর মধ্যে একটি সরাসরি কানেকশান (বা সার্কিট) ওপেন হয়ে যায়। আপনি যতক্ষণ টেলিফোনে কানেক্ট হয়ে থাকেন, সার্কিটটি ততোক্ষণ ওপেন হয়ে থাকে। একটি টেলিফোনের সাথে আরেকটি টেলিফোনকে কানেক্ট থাকার পদ্ধতিকে সার্কিট সুইচিং বলা হয়। কখন কার কথা শোনা যাবে । সার্কিট সুইচিং কোন নেটওয়ার্ক স্থাপন করার জন্য সত্যিই অদক্ষ একটি পদ্ধতি। আপনি যখনই ফোনে আপনার বন্ধুর সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকবেন তখন সেই লাইনে আপনার সাথে অন্য কেউ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেনা। আর কার কথা পাঠানো হবে তা নিয়ন্ত্রন করে ইলেক্ট্রনিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জ সিস্টেম।
কীভাবে কম্পিউটাররা ইন্টারনেটে বিভিন্ন কাজ করে থাকে?
পুরো ইন্টারনেট জুড়ে শতশত মিলিয়ন কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই কিন্তু একই কাজ করে না। এদের মধ্যে কিছু কম্পিউটার শুধু তথ্য সংগ্রহ করে রাখে এবং কোন তথ্য কোথাও থেকে অনুরোধ করা হলে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর এই মেশিন গুলোকে বলা হয় সার্ভার। যে মেশিন গুলো কোন ডকুমেন্ট স্টোর করে রাখে তাদের বলা হয় ফাইল সার্ভার।যে সার্ভার গুলো আপনার আমার মেইল ধারণ করে রাখে, এদের বলা হয় মেইল সার্ভার। এবং যে সার্ভার গুলো ওয়েবপেজ ধারণ করে রাখে তাদের বলা হয় ওয়েব সার্ভার। ইন্টারনেটে বহুত মিলিয়ন সার্ভার রয়েছে।

যে কম্পিউটার গুলো সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এদের বলা হয় ক্লায়েন্ট কম্পিউটার। আপনি যখন মেইল চেক করার জন্য ইন্টারনেটে প্রবেশ করেন তখন আপনার কম্পিউটারটি হলো ক্লায়েন্ট, আপনার আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার) হলো সার্ভার এবং মেইলটি আসে মেইল সার্ভার থেকে। ইন্টারনেটে সার্ভারের তুলনায় ক্লায়েন্টের সংখ্যা বেশি, প্রায় বিলিয়ন খানেক।
যখন দুটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে তথ্য আদান প্রদান করতে থাকে তখন একে বলা হয়ে থাকে পিরস (Peers)। আপনি যদি আপনার বন্ধুর সাথে ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং করেন বা ফটো আদান প্রদান করেন তবে এটি হলো পির টু পির (peer-to-peer) (P2P) কমুনিকেসন। পি টু পি তে কখনো আপনার কম্পিউটার ক্লায়েন্ট হিসেবে আচরন করে আবার কখনো আপনার কম্পিউটার সার্ভার হসেবে আচরন করে। মনে করুন আপনি আপনার বন্ধুকে ফটো সেন্ড করলেন, তখন আপনার কম্পিউটার সার্ভার হিসেবে কাজ করলো (ফটো সেন্ড করলো)। এবং আপনার বন্ধুর কম্পিউটার ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করবে (ফটো অ্যাক্সেস করবে)। আবার আপনার বন্ধু ফটো সেন্ড করলে তার কম্পিউটার সার্ভার হিসেবে কাজ করবে (ফটো সেন্ড করলো) আর আপনার কম্পিউটার এবার ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করবে (ফটো অ্যাক্সেস করবে)।
শুধু সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট ছাড়াও আরেকটি মধ্যম কম্পিউটার রয়েছে যা ইন্টারনেটের আরেকটি অংশ। আর এর নাম হলো রাউটার।এটি শুধু আলাদা সিস্টেমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে থাকে। আপনার বাড়িতে বা স্কুলে বা অফিসে যদি একাধিক কম্পিউটার থাকে তবে রাউটার সকলকে একত্রিত করে ইন্টারনেটে কানেক্ট করতে সাহায্য করে।

এখন জানতে হবে টিসিপি/আইপি  এবং ডিএনএস সম্পর্কে !!
ইন্টারনেটে ডাটা আদান প্রদান করার আসল ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও কোন ঘরের ইট খামে করে বহন করার মতো সহজ নয়। ইন্টারনেটের ডাটা গুলো কোন মানুষ যেমন আপনি বা আমি দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি দিন নেটে অসংখ্য ডাটা আদান প্রদান করা হয়ে থাকে—খসড়া ভাবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ইমেইলস এবং প্রচুর পরিমানে ট্র্যাফিক বিভিন্ন ডাটা ডাউনলোড এবং আপলোড করছে বিশ্বের ২৫০ মিলিয়ন ওয়েবসাইট জুড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি এই সকল ডাটা গুলোকে প্যাকেটে পরিণত করে পাঠানো হয়ে থাকে এবং কারো যদি কোন কন্ট্রোলই না থাকে তবে কীভাবে এই প্যাকেট গুলো না হারিয়ে প্রত্যেকে আসল গন্তব্যে পৌঁছে যায়?

টিসিপি/আইপি (TCP/IP) বা ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল। এই সিস্টেমটিই সকল প্যাকেট গুলোকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এটি বলতে পারেন টু ইন ওয়ান সিস্টেম। কম্পিউটারের দুনিয়ায় “প্রোটোকল” মানে হলো একটি স্ট্যান্ডার্ড যা প্রত্যেকে বিশ্বাস করে এবং সকল জিনিষ নিশ্চিতভাবে পৌঁছে গেছে তা নিশ্চিত করে।ইন্টারনেট প্রোটোকল বা আইপি হলো একটি সাধারন অ্যাড্রেসিং সিস্টেম। ইন্টারনেটে অবস্থিত সকল মেশিন আমারটা আপনারটা সবারটাতেই একটি ভিন্ন আইপি থাকে। যখন প্রত্যেকটি মেশিনে আলাদা আলাদা আইপি থাকবে তখন কোন মেশিন কোনটা তা সহজেই চেনা যাবে এবং সে অনুসারে প্যাকেট পাঠানো সম্ভব হয়ে থাকে। আইপি অ্যাড্রেস মূলত কিছু সংখ্যার সন্নিবেশ হয়ে থাকে।এবং সংখ্যা গুলো কমা বা কোলন ব্যবহার করে আলাদা করা হয়ে থাকে।
ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইটে আইপির বদলে সহজে মনে রাখার জন্য নাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন (ebangla.tech)। এই সিস্টেমের নাম হলো ডিএনএস বা ডোমেইন নেম সার্ভার। ডোমেইন নেম ব্রাউজারে প্রবেশ করানোর পড়ে কম্পিউটার এই আইপি খুঁজতে আরম্ভ করে এবং আইপি খুঁজে পেলে ওয়েব সার্ভার থেকে সাইট ওপেন হয়ে যায়।আইপি মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি হলো IPv4 এবং আরেকটি IPv6। আইপিভি৪ এ চার খণ্ডের ডিজিট থাকে। যেমন 12.34.56.78 অথবা 123.255.212.55। কিন্তু দ্রুত বর্ধমান ইন্টারনেট জগতে আজ আর নতুন কোন আইপিভি৪ অ্যাড্রেস অবশিষ্ট নেই। তাই নতুন এক সিস্টেম উদ্ভবন করা হয়েছে যার নাম হলো আইপিভি৬। এটি আইপিভি৪ এর তুলনায় অনেক লম্বা 123a:b716:7291:0da2:912c:0321:0ffe:1da2 হলো আইপিভি৬ এর উদাহরণ।