লিট বাংলা ডট টেক, প্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক বাংলাতেই।

হ্যাকিং / সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলা প্রযুক্তির ব্লগ

এবার রোগের সমাধান দিবে স্মার্টওয়াচ!

মাইক্রোসফট সম্প্রতি একটি ঘড়ি তৈরি করেছে যেটি পারকিনসনস রোগের মানুষদের আরও স্পষ্টভাবে লিখতে সাহায্য করতে পারে। এমা ওয়াচ নামের এই ওয়ারেবলটি মস্তিষ্কে স্পন্দন প্রেরণ করে যা হাতের কাপাকাপির নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে।


পারকিনসনস ডিজিজের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। “নিউরোডিজেনারেটিভ” ক্যাটাগরির এই রোগে মানুষের মস্তিষ্কের মিডব্রেইনের সাবস্টানশিয়া নাইগ্রা নামক স্থানের কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে। এই কোষগুলো ডোপামিন নামের একটি নিউরোট্রানসমিটার তৈরি করে, এরা মারা যাওয়ায় ডোপামিনের ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে মোটর ফাংশনে নানা উপসর্গগুলো দেখা দেয়। প্রধান উপসর্গগুলো হলো হাত-পায়ের অনিয়ন্ত্রিত কাপাকাপি, নড়াচড়া ধীর হয়ে যাওয়া, মাংশপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, হাঁটতে না পারা ইত্যাদি। বিশেষ করে হাতের কাঁপুনির ফলে শার্টের বোতাম লাগানো থেকে চামচে করে খাওয়া এসব সাধারন কাজও করতে অসুবিধায় ভুগেন পারকিনসনস ডিজিজের রোগীরা। লেখা বা আঁকাআঁকির মতো সুক্ষ্ণ কাজগুলো তো আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে পারকিনসনসের রোগীরা প্রায়শই ডিপ্রেশনে আক্রান্তও হয়ে পরেন। বিশ্বজুড়ে ১০ মিলিয়নের বেশি লোক এতে আক্রান্ত।

 মাইক্রোসফট তার বিল্ড কনফারেন্সের সময় ঘড়ি উন্মোচন করে। যদিও এটি এখন শুধুই একটি প্রোটোটাইপ, তবে নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্তদের জন্য এটি অনেক বড় একটি আশার আলো নিয়ে এসেছে। এমা ওয়াচকে নামকরণ করা হয়েছে এমা লটনের নামে। এমা একজন গ্রাফিক ডিজাইনার যিনি মাইক্রোসফ্টের রিসার্চ ইনোভেশন ডাইরেক্টর হেইয়ান ঝ্যাংয়ের একজন বন্ধু, এবং পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। ঝ্যাং বিশেষ করে তার জন্য ঘড়ি তৈরি করেছেন। এটিতে ছোট ছোট ভাইব্রেশন মোটর আছে, তার মাধ্যমে ডিভাইসটি কম্পন তৈরি করতে থাকে এবং মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে এবং ব্যস্ত রেখে অনাকাংখিত কাপাকাপি তৈরি করা থেকে বিরত রাখে। ফলে লেখালেখির কাজটা সহজ করে তোলে, যা একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের জন্য সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। লটন একটি নির্দিষ্ট রিদমিক কম্পন সিরিজ ব্যবহার করেন, তবে এই ডিভাইসের প্যাটার্নটি একটি উইন্ডোজ ১০ ট্যাবলেটের অ্যাপ ব্যবহার করে কাস্টমাইজ করা যায়।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস এবং সেন্সর কাজে লাগিয়ে পারকিনসন এর রোগীদের কিভাবে আরো সাহায্য করা যায় সে ব্যাপারে ঝ্যাং গবেষনা আরো চালিয়ে যেতে চান। পারকিনসনস ডিজিজের মত স্নায়ুতন্ত্রের ডিজেনারেটিভ রোগগুলো চিকিৎসকদের কাছে বহু বছর ধরেই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে রয়েছে। তার মূল কারণ নিউরাল কোষ সাধারনত রিজেনারেট করে না। কাজেই শরীরের অন্যান্য স্থানে ইনজুরি হলে তা মোটামুটি মেরামত হতে পারে, এমনকি কিছু স্থানে রিজেনারেশন এত চমৎকার হয় যে তা নতুনের মতোই হয়ে ওঠে, কিন্তু ব্রেইন বা স্পাইনাল কর্ডের ক্ষেত্রে তা হয় না। এতদিন পর্যন্ত এসব রোগের ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্টাল কিছু ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। ষাটের দশকে রয়াল জেলি টাইপের কিছু ভেষজ চিকিৎসা ব্যবহার করা হতো। শার্লক হোমস সিরিজের শেষ দিকের বইতে জীবনের শেষ প্রান্তে শার্লক হোমসকে বার্ধক্যজনিত কারণে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতাতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, সে সময় হোমস সুদূর চীন থেকে রয়াল জেলি আনিয়ে নেন।
 প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ফলে এসব রোগে আক্রান্তদের জীবন আগের চেয়ে সহজতর হতে পারে।