লিট বাংলা ডট টেক, প্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক বাংলাতেই।

হ্যাকিং / সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলা প্রযুক্তির ব্লগ

পৃথিবীর সব থেকে দামি বেতনভুক্ত কর্মচারী - গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই

গুগলের সিইওর বেতন বলে কথা!
গত বছরে কত টাকা বেতন পেয়েছেন তিনি? সবার জানার আগ্রহ থাকতেই পারে। তাঁর বেতনটা আকর্ষণীয় ও চোখ-ধাঁধানো, তাতে সন্দেহ নেই।গত বছরে তিনি পেয়েছেন ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। তবে পুরোটা কিন্তু নগদ অর্থে বেতন হিসেবে পাননি পিচাই। এর মধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বেতন আর বাকিটা শেয়ার হিসেবে তাঁর নামে জমা হয়েছে।এদিক থেকে হিসাব করলে বেতন হিসেবে ২০১৫ সালের চেয়ে তাঁর বেতন কিছুটা কমেছে। ২০১৫ সালে ৬ লাখ ৫২ হাজার মার্কিন ডলার বেতন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৫ সালে স্টক অব শেয়ার হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৯৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৬ সালে এসে বেড়ে ১৯৮ দশমিক ৭ মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে।

২০১৫ সালের আগস্ট মাসে গুগলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুন্দর পিচাই।
গত দেড় বছরের মধ্যে গুগলের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সফলভাবে সামলানোর পাশাপাশি নতুন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন পিচাই। তাঁর নতুন পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছে গুগলের বেতন-সংক্রান্ত কমিটি। গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ অ্যালফাবেট নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে কাজ করেছেন। শুধু গুগলের দায়িত্ব রয়েছে পিচাইয়ের কাঁধে। তবে ইউটিউবের বিজ্ঞাপনী আয় বাড়ানো, ক্লাউড কম্পিউটিং, মুঠোফোনসহ নতুন ক্ষেত্রগুলোতে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন পিচাই। এসব উদ্যোগ থেকে আয় করতে শুরু করেছে গুগল। তারই প্রতিফলন ঘটেছে সুন্দর পিচাইয়ের বেতনে।
গত বছরে গুগলের হার্ডওয়্যার ও ক্লাউড ব্যবসা ৫০ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
মন এক দৈত্য, যাকে ছাড়া আজকের দিনে আমরা অচল
সময় যত এগোবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির স্নেহচ্ছায়া আরওই বেশি-বেশি করে এসে পড়বে বলেই আশা। প্রযুক্তিকে উপকারী, আরও উপকারী করে তোলার এই কাজ বিশ্বজুড়ে হাতে গোনা যে তুখোড় মস্তিষ্করা চলেছেন অনলসভাবে, গর্বের সঙ্গে বলা যায়, তাদের অনেকেই ভারতীয়। বিশ্বাস না হলে একটা লিস্টি দেখি? ইন্দ্রা নুয়ি (PEPSICO), সত্য নাদেল্লা (MICROSOFT), রাজীব সুরি (NOKIA), শান্তনু নারায়ণ (ADOBE), রাকেশ কপূর(RECKITT BENCKISER), অজয়পালসিংহ বঙ্গা (MASTERCARD), সঞ্জয় মেহরোত্র (SANDISK),ফ্রান্সিসকো ডিসুজা (COGNIZANT)। এই মানুষগুলোর প্রত্যেকে ওই কোম্পানিগুলোর হর্তাকর্তা,এবং প্রত্যেকেই ভারতীয়। এই তালিকায় এক্কেবারে টাটকা সংযোজন চেন্নাইয়ের PICHAI SUNDARARAJAN।

সুন্দর সম্পর্কে সুন্দর তথ্য

১. সুন্দরের সিইও হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে গুগল চলে এসেছে ‘ALPHABET’ নামের বড়দা কোম্পানি ছাতার তলায়। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা LARRY PAGE ও SERGEY BRIN থাকছেন অ্যালফাবেটের দায়িত্বে। অধীনস্থ গুগলের দায়িত্বে রইলেন সুন্দর।
২. তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে সুন্দরের জন্ম ১৯৭২ সালে। ভীষণ সাধারণ পরিবারের সন্তান সুন্দর ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। সাতের দশকের ভারতের সেই সাধারণ পরিবারের অসাধারণ ছেলেটির আনুমানিক সম্পত্তির পরিমাণ আজ প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার!
৩. সহকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেই নাকি পায়চারি করতে থাকেন সুন্দর। ঘরভর্তি লোক,মিটিং চলছে, এদিকে চিন্তিত মুখে ঘরের মধ্যেই পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন সুন্দর, এই দৃশ্য আচমকা দেখতে পেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।
৪. সুন্দরের বাবা ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনবছর টাকা জমিয়ে তবে তিনি কিনতে পেরেছিলেন একটি স্কুটার। অর্থকষ্ট থাকলেও সুন্দর ও তাঁর ভাইয়ের লেখাপড়ার ব্যবস্থায় কিন্তু কোনওদিন কোনও অভাব হতে দেননি সিনিয়র সুন্দররাজন।
৫. বাবার কাছেই ছোটবেলায় সুন্দর শুনতেন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কী-কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।সেই শুনতে-শুনতেই নাকি প্রযুক্তির প্রতি সুন্দরের আগ্রহের জন্ম।
৬. নিজের হাইস্কুলে সুন্দর ছিলেন ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন। সেখান থেকে KHARAGPUR IIT-তে বিটেক, তারপর STANFORD UNIVERSITY থেকে এমএস, এবং অবশেষে Wharton School of the University of Pennsylvania থেকে এমবিএ।
৭. আইআইটি থেকে যখন স্ট্যানফোর্ডে যাচ্ছেন সুন্দর, তাঁর বাবাকে নিজের সেভিংস থেকে যে পরিমাণ টাকা বের করতে হয়েছিল, তা ছিল তাঁর পুরো একবছরের রোজগারের সমতুল্য।
৮. গুগলে যোগ দেওয়ার আগে সুন্দর ছিলেন McKinsey & Company-র ম্যানেজমেন্ট কনসালটিংয়ে।
৯. পিচাই গুগ্লে কাজ করছেন সেই ২০০৪ সালে। গোড়ায় তাঁর দায়িত্বে ছিল GOOGLE CHROME ও ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট। সেইসঙ্গে GOOGLE DRIVE-এর সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে GMAIL ও GOOGLE MAP দেখভালের দায়িত্বও বর্তায় তাঁর উপরেই।
১০. ২০১১-য় TWITTER সুন্দরকে মোটা টাকা অফার করে, google ছেড়ে টুইটারে যোগ দেওয়ার জন্য। সুন্দর সেই আহ্বানে সাড়া দেননি। গুগলও সেসময় তাঁর পারিশ্রমিক বাড়িয়ে তাঁকে আটকে রাখতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। বড়-বড় কোম্পানি যাকে নিয়ে এমন কামড়াকামড়ি করে মরে, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন ডলার হবে না তো কার হবে?