ফোনের কথোপকথন কানে গিয়েছিল পড়শির। সেই সুবাদে ‘নীল তিমি’র (ব্লু হোয়েল) খপ্পর থেকে উদ্ধার হল এক স্কুল-ছাত্র। শুক্রবার রাতে বাঁকুড়া শহরের ঘটনা।
বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রটি ফোনে কাউকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘হাত কী ভাবে কাটতে হবে’? সে কথা শুনে ফেলেন এক পড়শি। তাঁর থেকে খবর পায় ছাত্রের পরিবার। বছর সতেরোর ওই তরুণের কাকা জানান, খবর পেয়েই ভাইপোর ফোন কেড়ে তাঁরা সাহায্য চান বাঁকুড়া সদর থানার। পুলিশ ছেলেটিকে হাসপাতালে পাঠায়। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ব্লু হোয়েলের মতো গেমের ভয়ঙ্কর প্রভাব সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করতে আমরা ইতিমধ্যেই স্কুল-কলেজে শিবির শুরু করেছি। এখন দেখছি, আরও জোরদার প্রচার চালাতে হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির বাবা নেই। মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। ছেলেকে মোবাইলটি মা-ই কিনে দেন। সেই মোবাইলে ছেলে এমন একটা খেলা খেলছিল, যার পরিণতি আত্মহত্যাও হতে পারত— এ কথা জেনে ভেঙে পড়েন ওই বিধবা। বলেন, ‘‘বাড়িতে ও সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকত। খুব কম কথা বলছিল গত মাস দু’-তিন। ফোন নিয়ে বাড়ির কেউ কিছু বললে রেগে যেত। তা যে এই কারণে, তা বুঝিনি।’’ কাকার দাবি, ওই কিশোর কয়েক মাস আগে কথায় কথায় ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার ব্যাপারে তাঁকে বলেছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। ফলে, কোনও সন্দেহ হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস, আমাদের পড়শি ভাইপোর ফোনের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছিলেন, না হলে কী হতো!’’‘ব্লু হোয়েল’ খেলা নিয়ে সম্প্রতি এ রাজ্যেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। দিনকয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক ছাত্রকে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার মাঝপথে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার হাওড়ার এক স্কুল-ছাত্র ওই খেলায় মেতেছে জানতে পেরে, শুরু হয় ‘কাউন্সেলিং’।
শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের একটি স্কুলে ক্লাসে বসে হাতে ‘নীল তিমি’র ছবি আঁকায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে জেরা করেছে পুলিশ।
‘ব্লু হোয়েল’ খেলা নিয়ে সম্প্রতি এ রাজ্যেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। দিনকয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক ছাত্রকে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার মাঝপথে উদ্ধার করা হয়।
রিষড়ায় দশম শ্রেণির ছাত্রের হাতে ‘নীল তিমি’ঃ--নীল তিমির আতঙ্ক ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে এ রাজ্যেও। উত্তরপ্রদেশ, কেরল, মহারাষ্ট্র, গুয়াহাটির পর এ বার নীল তিমির আতঙ্ক বালির রিষড়াতে। রিষড়ার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রের হাতে মিলল ‘নীল তিমি’র ছবি।পুলিশ জানিয়েছে, নিজের বাঁ হাতে কম্পাস দিয়ে চিরে ওই ছবি এঁকেছিল সে। ছাত্রটিকে জি়জ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, মোবাইলে একটি লিঙ্ক পেয়ে ওই মারণ খেলায় মেতেছিল সে। খেলাটি যে ‘ব্লু হোয়েল’, সেটা সে তখনও জানত না। খেলায় এমন ভাবে মেতে গিয়েছিল যে তার থেকে বার হতেও পারছিল না। তার অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছে সে। তাই আপাতত তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ারই পরিকল্পনা করেছেন বাড়ির লোকেরা।পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ওই ছাত্রটি খেলাধুলোতেও তুখোড়।
তার অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, গত তিন-চার মাস ধরে সে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। পড়াশোনাতেও অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল। সবসময় চুপচাপ থাকত। কারও সঙ্গে বিশেষ মিশত না। সবসময় মোবাইল নিয়েই তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। ছেলেটির মা জানিয়েছেন, রাত তিনটের সময় উঠে সে মোবাইল নিয়ে কিছু করত। জিজ্ঞাসা করলে কোনও উত্তর দিত না। স্কুলের শিক্ষকদেরও এই ব্যাপারে জানিয়েছিলেন তার বাড়ির লোকজন। তবে তাঁরাও প্রথমে বোঝেননি যে ছাত্রটি ‘ব্লু হোয়েল’ নামক মারণ খেলার ফাঁদে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে এক জন শিক্ষকের। ক্লাস চলাকালীন তিনি দেখেন ওই ছাত্রের বাঁ হাতে নীল তিমির ছবি আঁকা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল প্রিন্সিপালকে বিষয়টি তিনি জানান। ছাত্রের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়। তাকে বাড়ি থেকে দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছে।কয়েক দিন আগেই ‘ব্লু হোয়েল’-এর খপ্পরে পড়ে মাদুরাইয়ের তিরুমঙ্গলম এলাকার ১৯ বছর বয়সী ছাত্র আত্মহত্যা করেছে।
নীল তিমির গ্রাসে আরও যে কত জনঃ---কোথাও রচনা লিখতে দিয়ে, কোথাও বা হাত পরীক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন স্কুলে মিলছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’-এ আসক্ত পড়ুয়ার খোঁজ। যত বাড়ছে খোঁজ, ততই বেরিয়ে আসছে মারণ খেলায় আসক্ত নতুন নতুন নাম। কিন্তু এর সুরাহা কোথায়? এ খেলা বন্ধ করবে কে? বহু চেষ্টাতেও মিলছে না দিশা।
বৃহস্পতিবার বারাসত গার্লস স্কুলে দুই ছাত্রী ওই মারণ খেলায় আসক্ত বলে খবর এসেছিল। শুক্রবার আবার জানা গিয়েছে বারাসাত কালীকৃষ্ণ স্কুলের দুই ছাত্রী ওই খেলায় আসক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, আরও কিছু ছাত্রীও নিয়মিত এই খেলা খেলছে বলে খবর এসেছে। ব্লু হোয়েলে আসক্ত হুগলির রিষড়া স্কুলের এক ছাত্রেরও কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলের আর এক ছাত্রের।
‘ব্লু হোয়েল গেম এর অপকারিতা’ নিয়ে সচেতনতা চলাকালীন শুক্রবার বারাসতের স্কুল থেকে আরও কিছু ছাত্রী আসক্ত বলে খোঁজ মিলেছে। বারাসত কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলে এ দিন সব ছাত্রীদের ডেকে কথা বলা এবং হাত পরীক্ষা শুরু করেন শিক্ষিকারা। দেখা যায়, একটি মেয়ের হাতে নীল তিমি আঁকা। সে জানায়, পরিচিত এক দাদার থেকে ব্লু হোয়েলের লিঙ্ক পেয়েছে। আর একটি মেয়ের হাত-পায়ে ব্লেড দিয়ে অজস্র কাটাকাটি ছিল। এর পরেই তাদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয়।গত কয়েক মাস ধরে যেমন অবস্থা হয়েছিল বালির বাসিন্দা, মাহেশের স্কুল পড়ুয়াটিরও। সদা চঞ্চল ছেলেকে বেশ কয়েক দিন ধরেই মনমরা লাগছিল। গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে ব্যস্ত থাকত সে। ভোরে উঠেই তুলে নিত মোবাইল। ছেলের এমন আচরণে চিন্তায় পড়ে যান বাবা-মা। শেষমেশ বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফোন আসে, ছেলে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের শিকার!
মা-বাবা জানান, পড়াশোনাতেও অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল বছর পনেরোর ছেলেটি। বৃহস্পতিবার ওই পড়ুয়া বাঁ হাত তুলতে চমকে ওঠেন শিক্ষক। দেখেন, কব্জির কয়েক ইঞ্চি নীচে মাছের অবয়ব আঁকা। কাছে ডেকে দেখা যায়, হাতে ব্লু হোয়েলের ১১ নম্বর ধাপের নীল তিমির ছবি। আসে পুলিশ। প্রধান শিক্ষক সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই ছাত্রের কাউন্সেলিং করতে বলা হয়েছে।’’ শুক্রবার ওই ছাত্র জানায়, দিন কুড়ি আগে তার মোবাইলে আচমকাই ব্লু হোয়েল গেমের লিঙ্ক আসে। কৌতূহলবশত ক্লিক করতেই সে জড়িয়ে পরে ওই খেলায়। ওই কিশোরের বাবা বলেন, ‘‘পড়াশোনার জন্য ইন্টারনেটের দরকার হয় বলে মোবাইলটা কিনে দিয়েছিলাম।’’ ঘটনা জানার পরেই ছেলের থেকে মোবাইল নিয়ে নিয়েছেন বাবা-মা।
বৃহস্পতিবার দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে নিয়ে হইচই হয় হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে। স্কুল সূত্রের খবর, ক্লাসে বসে ট্যাব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল ছেলেটা। বারবার তাকাচ্ছিল ডান হাতের ক্রেপ ব্যান্ডেজ ঢাকা কব্জির দিকে। সন্দেহ হওয়ায় শিক্ষকেরা বিষয়টি জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। এর পরেই তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ দেখে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ লেখা। পুলিশের দাবি, ওই পড়ুয়া কাউন্সেলিংয়ে জানিয়েছে, এক বন্ধু মারফত ‘ব্লু হোয়েল গেম’ ডাউনলোড করেছিল। প্রথমে নীল কালি দিয়ে ‘ব্লু হোয়েল’ শব্দটি লিখে ছবি তুলে পাঠিয়েছিল ওই অ্যাপে। কিন্তু ছবি গৃহীত হয়নি। জানানো হয়, রক্ত দিয়ে লিখতে হবে। তখন মশা মেরে তার রক্ত আলতার সঙ্গে মিশিয়ে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ লেখে। এ বার তা গৃহীত হয়। পুলিশকে ওই ছাত্র জানিয়েছে, এক সময়ে খেলা থেকে সে বেরোতে চেয়েছিল। তখন তার বাবাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়।
সূএঃ-- আনন্দ বাজার
ব্লু হোয়েল এর চ্যালেঞ্জ গুলো এবং বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই ফিচারটি - ব্লু হোয়েল গেম
বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রটি ফোনে কাউকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘হাত কী ভাবে কাটতে হবে’? সে কথা শুনে ফেলেন এক পড়শি। তাঁর থেকে খবর পায় ছাত্রের পরিবার। বছর সতেরোর ওই তরুণের কাকা জানান, খবর পেয়েই ভাইপোর ফোন কেড়ে তাঁরা সাহায্য চান বাঁকুড়া সদর থানার। পুলিশ ছেলেটিকে হাসপাতালে পাঠায়। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ব্লু হোয়েলের মতো গেমের ভয়ঙ্কর প্রভাব সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করতে আমরা ইতিমধ্যেই স্কুল-কলেজে শিবির শুরু করেছি। এখন দেখছি, আরও জোরদার প্রচার চালাতে হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির বাবা নেই। মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। ছেলেকে মোবাইলটি মা-ই কিনে দেন। সেই মোবাইলে ছেলে এমন একটা খেলা খেলছিল, যার পরিণতি আত্মহত্যাও হতে পারত— এ কথা জেনে ভেঙে পড়েন ওই বিধবা। বলেন, ‘‘বাড়িতে ও সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকত। খুব কম কথা বলছিল গত মাস দু’-তিন। ফোন নিয়ে বাড়ির কেউ কিছু বললে রেগে যেত। তা যে এই কারণে, তা বুঝিনি।’’ কাকার দাবি, ওই কিশোর কয়েক মাস আগে কথায় কথায় ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার ব্যাপারে তাঁকে বলেছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। ফলে, কোনও সন্দেহ হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস, আমাদের পড়শি ভাইপোর ফোনের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছিলেন, না হলে কী হতো!’’‘ব্লু হোয়েল’ খেলা নিয়ে সম্প্রতি এ রাজ্যেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। দিনকয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক ছাত্রকে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার মাঝপথে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার হাওড়ার এক স্কুল-ছাত্র ওই খেলায় মেতেছে জানতে পেরে, শুরু হয় ‘কাউন্সেলিং’।
শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের একটি স্কুলে ক্লাসে বসে হাতে ‘নীল তিমি’র ছবি আঁকায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে জেরা করেছে পুলিশ।
‘ব্লু হোয়েল’ খেলা নিয়ে সম্প্রতি এ রাজ্যেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। দিনকয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক ছাত্রকে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার মাঝপথে উদ্ধার করা হয়।
রিষড়ায় দশম শ্রেণির ছাত্রের হাতে ‘নীল তিমি’ঃ--নীল তিমির আতঙ্ক ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে এ রাজ্যেও। উত্তরপ্রদেশ, কেরল, মহারাষ্ট্র, গুয়াহাটির পর এ বার নীল তিমির আতঙ্ক বালির রিষড়াতে। রিষড়ার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রের হাতে মিলল ‘নীল তিমি’র ছবি।পুলিশ জানিয়েছে, নিজের বাঁ হাতে কম্পাস দিয়ে চিরে ওই ছবি এঁকেছিল সে। ছাত্রটিকে জি়জ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, মোবাইলে একটি লিঙ্ক পেয়ে ওই মারণ খেলায় মেতেছিল সে। খেলাটি যে ‘ব্লু হোয়েল’, সেটা সে তখনও জানত না। খেলায় এমন ভাবে মেতে গিয়েছিল যে তার থেকে বার হতেও পারছিল না। তার অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছে সে। তাই আপাতত তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ারই পরিকল্পনা করেছেন বাড়ির লোকেরা।পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ওই ছাত্রটি খেলাধুলোতেও তুখোড়।
তার অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, গত তিন-চার মাস ধরে সে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। পড়াশোনাতেও অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল। সবসময় চুপচাপ থাকত। কারও সঙ্গে বিশেষ মিশত না। সবসময় মোবাইল নিয়েই তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। ছেলেটির মা জানিয়েছেন, রাত তিনটের সময় উঠে সে মোবাইল নিয়ে কিছু করত। জিজ্ঞাসা করলে কোনও উত্তর দিত না। স্কুলের শিক্ষকদেরও এই ব্যাপারে জানিয়েছিলেন তার বাড়ির লোকজন। তবে তাঁরাও প্রথমে বোঝেননি যে ছাত্রটি ‘ব্লু হোয়েল’ নামক মারণ খেলার ফাঁদে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে এক জন শিক্ষকের। ক্লাস চলাকালীন তিনি দেখেন ওই ছাত্রের বাঁ হাতে নীল তিমির ছবি আঁকা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল প্রিন্সিপালকে বিষয়টি তিনি জানান। ছাত্রের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়। তাকে বাড়ি থেকে দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছে।কয়েক দিন আগেই ‘ব্লু হোয়েল’-এর খপ্পরে পড়ে মাদুরাইয়ের তিরুমঙ্গলম এলাকার ১৯ বছর বয়সী ছাত্র আত্মহত্যা করেছে।
নীল তিমির গ্রাসে আরও যে কত জনঃ---কোথাও রচনা লিখতে দিয়ে, কোথাও বা হাত পরীক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন স্কুলে মিলছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’-এ আসক্ত পড়ুয়ার খোঁজ। যত বাড়ছে খোঁজ, ততই বেরিয়ে আসছে মারণ খেলায় আসক্ত নতুন নতুন নাম। কিন্তু এর সুরাহা কোথায়? এ খেলা বন্ধ করবে কে? বহু চেষ্টাতেও মিলছে না দিশা।
বৃহস্পতিবার বারাসত গার্লস স্কুলে দুই ছাত্রী ওই মারণ খেলায় আসক্ত বলে খবর এসেছিল। শুক্রবার আবার জানা গিয়েছে বারাসাত কালীকৃষ্ণ স্কুলের দুই ছাত্রী ওই খেলায় আসক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, আরও কিছু ছাত্রীও নিয়মিত এই খেলা খেলছে বলে খবর এসেছে। ব্লু হোয়েলে আসক্ত হুগলির রিষড়া স্কুলের এক ছাত্রেরও কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলের আর এক ছাত্রের।
‘ব্লু হোয়েল গেম এর অপকারিতা’ নিয়ে সচেতনতা চলাকালীন শুক্রবার বারাসতের স্কুল থেকে আরও কিছু ছাত্রী আসক্ত বলে খোঁজ মিলেছে। বারাসত কালীকৃষ্ণ গার্লস স্কুলে এ দিন সব ছাত্রীদের ডেকে কথা বলা এবং হাত পরীক্ষা শুরু করেন শিক্ষিকারা। দেখা যায়, একটি মেয়ের হাতে নীল তিমি আঁকা। সে জানায়, পরিচিত এক দাদার থেকে ব্লু হোয়েলের লিঙ্ক পেয়েছে। আর একটি মেয়ের হাত-পায়ে ব্লেড দিয়ে অজস্র কাটাকাটি ছিল। এর পরেই তাদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয়।গত কয়েক মাস ধরে যেমন অবস্থা হয়েছিল বালির বাসিন্দা, মাহেশের স্কুল পড়ুয়াটিরও। সদা চঞ্চল ছেলেকে বেশ কয়েক দিন ধরেই মনমরা লাগছিল। গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে ব্যস্ত থাকত সে। ভোরে উঠেই তুলে নিত মোবাইল। ছেলের এমন আচরণে চিন্তায় পড়ে যান বাবা-মা। শেষমেশ বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফোন আসে, ছেলে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের শিকার!
মা-বাবা জানান, পড়াশোনাতেও অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল বছর পনেরোর ছেলেটি। বৃহস্পতিবার ওই পড়ুয়া বাঁ হাত তুলতে চমকে ওঠেন শিক্ষক। দেখেন, কব্জির কয়েক ইঞ্চি নীচে মাছের অবয়ব আঁকা। কাছে ডেকে দেখা যায়, হাতে ব্লু হোয়েলের ১১ নম্বর ধাপের নীল তিমির ছবি। আসে পুলিশ। প্রধান শিক্ষক সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই ছাত্রের কাউন্সেলিং করতে বলা হয়েছে।’’ শুক্রবার ওই ছাত্র জানায়, দিন কুড়ি আগে তার মোবাইলে আচমকাই ব্লু হোয়েল গেমের লিঙ্ক আসে। কৌতূহলবশত ক্লিক করতেই সে জড়িয়ে পরে ওই খেলায়। ওই কিশোরের বাবা বলেন, ‘‘পড়াশোনার জন্য ইন্টারনেটের দরকার হয় বলে মোবাইলটা কিনে দিয়েছিলাম।’’ ঘটনা জানার পরেই ছেলের থেকে মোবাইল নিয়ে নিয়েছেন বাবা-মা।
বৃহস্পতিবার দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে নিয়ে হইচই হয় হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে। স্কুল সূত্রের খবর, ক্লাসে বসে ট্যাব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল ছেলেটা। বারবার তাকাচ্ছিল ডান হাতের ক্রেপ ব্যান্ডেজ ঢাকা কব্জির দিকে। সন্দেহ হওয়ায় শিক্ষকেরা বিষয়টি জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। এর পরেই তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ দেখে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ লেখা। পুলিশের দাবি, ওই পড়ুয়া কাউন্সেলিংয়ে জানিয়েছে, এক বন্ধু মারফত ‘ব্লু হোয়েল গেম’ ডাউনলোড করেছিল। প্রথমে নীল কালি দিয়ে ‘ব্লু হোয়েল’ শব্দটি লিখে ছবি তুলে পাঠিয়েছিল ওই অ্যাপে। কিন্তু ছবি গৃহীত হয়নি। জানানো হয়, রক্ত দিয়ে লিখতে হবে। তখন মশা মেরে তার রক্ত আলতার সঙ্গে মিশিয়ে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ লেখে। এ বার তা গৃহীত হয়। পুলিশকে ওই ছাত্র জানিয়েছে, এক সময়ে খেলা থেকে সে বেরোতে চেয়েছিল। তখন তার বাবাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়।
সূএঃ-- আনন্দ বাজার
ব্লু হোয়েল এর চ্যালেঞ্জ গুলো এবং বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই ফিচারটি - ব্লু হোয়েল গেম